রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৩২ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

একাধিক ও গায়েবানা জানাজার বিধান

মাওলানা আবদুল জাব্বার:
জানাজা শুধু একবার পড়াই বিধান। এক মৃতের একাধিক জানাজা সুন্নাহসম্মত নয়। সুতরাং মৃতের অভিভাবক জানাজা পড়ে নিলে বা তার সম্মতিতে জানাজা পড়া হয়ে গেলে দ্বিতীয়বার জানাজা পড়া বেদআত ও মাকরুহ। হজরত নাফে (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) কোনো জানাজায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে জানাজা শেষ হয়ে গেলে মৃতের জন্য দোয়া করে ফিরে আসতেন। দ্বিতীয়বার জানাজা পড়তেন না। আবদুর রাজজাক : ৬৫৪৫

ইবরাহিম নখয়ি (রহ.) এক মাইয়্যেতের একাধিক জানাজা পড়তে নিষেধ করেছেন। মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ১২০৭০

হজরত হাসান বসরি (রহ.) সম্পর্কে বর্ণিত আছে, তিনি মৃতের জানাজা না পেলে মৃতের জন্য ইস্তিগফার করতেন। অতঃপর বসতেন অথবা ফিরে যেতেন। মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ১২০৭১

সালেহ ইবনে নাবহান (রহ.) বলেন, সাহাবারা জানাজার জায়গা সংকীর্ণ হলে (মসজিদে) নামাজ না পড়ে ফিরে যেতেন। ইবনে আবি শায়বা : ১২০৯৭

এসব বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হয়, সাহাবা-তাবেঈনের যুগে দ্বিতীয়, তৃতীয় জানাজার প্রচলন ছিল না। একাধিক জানাজা যদি জায়েজ হতো, তবে তারা ফিরে যেতেন না। মৃতের জানাজা হয়ে যাওয়ার পর হাদিসের নির্দেশনা মোতাবেক লাশ দ্রুত দাফন করে দেওয়া শরিয়তের নির্দেশ। দ্বিতীয় বা তৃতীয় জানাজার জন্য লাশ রেখে দেওয়া নিয়ম পরিপন্থী। বাদায়েউস সানায়ে : ২/৪৭

গায়েবানা জানাজা প্রসঙ্গ

জানাজা সহিহ হওয়ার জন্য লাশ সামনে উপস্থিত থাকা আবশ্যক। অনুপস্থিত লাশের গায়েবানা জানাজা আদায়ের বিধান নেই। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় অসংখ্য সাহাবি মদিনার বাইরে দূর-দূরান্তে শহীদ হয়েছেন। কিন্তু হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে তাদের গায়েবানা জানাজা পড়ার কোনো ঘটনা বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত নেই। অথচ হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবায়ে কেরামের জানাজা পড়ার ব্যাপারে খুবই আগ্রহী ছিলেন। এজন্য তিনি বলে দিয়েছিলেন, ‘তোমাদের কেউ মারা গেলে আমাকে জানাবে। কেননা আমার জানাজা মৃতের জন্য রহমত।’ সহিহ ইবনে হিব্বান : ৩০৮৩

তদ্রƒপ খোলাফায়ে রাশেদিন থেকেও গায়েবানা জানাজা পড়ার প্রমাণ নেই। অথচ তাদের খেলাফতকালে বিভিন্ন মুজাহিদ শহীদ হয়েছেন। গায়েবানা জানাজা যদি সুন্নাহসম্মত হতো, তাহলে সাহাবিরা অবশ্যই ওই সুন্নাহর অনুসরণ করতেন; কখনো পরিত্যাগ করতেন না। আল্লামা ইবনুল কায়্যিম (রহ.) জাদুল মাআদ গ্রন্থে লেখেন, অনুপস্থিত লাশের গায়েবানা জানাজা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহ ও আদর্শ ছিল না। কেননা অসংখ্য মুসলমান দূর-দূরান্তে ইন্তেকাল করেছেন। কিন্তু তিনি তাদের গায়েবানা জানাজা পড়েননি। জাদুল মাআদ : ১/১৪৮

সুতরাং বর্তমানে যেসব অনুপস্থিত লাশের গায়েবানা জানাজা পড়া হয় তা সুন্নাহসম্মত নয় এবং সালাফের আমলের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। তাই এ প্রথা অবশ্যই বর্জনীয়।

উল্লেখ্য, কেউ কেউ গায়েবানা জানাজা প্রমাণ করার জন্য হজরত রাসুলে করিম (সা.) কর্র্তৃক বাদশাহ নাজ্জাশির জানাজা পড়াকে দলিল হিসেবে পেশ করতে চান। কিন্তু পুরো বিষয়টি সামনে রাখলে এ কথা স্পষ্ট বোঝা যায়, নাজ্জাশির জানাজা পড়ার ঘটনাটি বর্তমানে প্রচলিত গায়েবানা জানাজার জন্য দলিল হতে পারে না। কারণ সেটি ছিল বিশেষ একটি ঘটনা, যা ব্যাপকভাবে গায়েবানা জানাজা জায়েজ হওয়াকে প্রমাণ করে না। এ ছাড়া মুসনাদে আহমদ ও সহিহ ইবনে হিব্বানে নাজ্জাশির জানাজা সম্পর্কিত একটি হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, নাজ্জাশির লাশ কুদরতিভাবে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সামনেই উপস্থিত ছিল।

হজরত ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তিনি বলেন, তোমাদের ভাই নাজ্জাশি ইন্তেকাল করেছে। সুতরাং তোমরা তার জানাজা আদায় করো। হজরত ইমরান (রা.) বলেন, অতঃপর রাসুলে করিম (সা.) দাঁড়ালেন। আর আমরা তার পেছনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ালাম। অতঃপর তিনি তার জানাজা পড়ালেন। আমাদের মনে হচ্ছিল, নাজ্জাশির লাশ তার সামনেই রাখা ছিল। মুসনাদে আহমদ : ২০০০৫

আর অনেক মুহাদ্দিস নাজ্জাশির জানাজা-সংক্রান্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, এ ঘটনাটি বিশেষ এক প্রয়োজনের কারণে সংঘটিত হয়েছিল। তা হলো, নাজ্জাশির মৃত্যু হয়েছিল এমন এক ভূখণ্ডে যেখানে তার জানাজা পড়ার মতো কোনো (মুসলিম) ব্যক্তি ছিল না। তাই আল্লাহর রাসুল (সা.) সাধারণ নিয়মের বাইরে তার জানাজা পড়িয়েছেন।

উলামায়ে কেরাম এ ঘটনার আরও অন্যান্য ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। যা হোক, এটা ছিল নববি জীবনের স্বাভাবিক রীতিবহির্ভূত মাত্র একটি ঘটনা। এর ওপর ভিত্তি করে ব্যাপকভাবে প্রচলিত গায়েবানা জানাজাকে বৈধ বলার সুযোগ নেই। কেননা অনুসৃত সুন্নাহর সঙ্গে এটির কোনো মিল নেই।

এ ছাড়া যে লাশের কোথাও জানাজার ব্যবস্থা আছে এবং তার জানাজা হয়েছে বা হচ্ছে তার গায়েবানা জানাজা পড়ার একটি ঘটনাও হাদিসের কিতাবে পাওয়া যায় না। তাই এটি অবশ্যই পরিত্যাজ্য। সহিহ বোখারি : ৪০৯০

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION